০৫ মে ২০২৫, সোমবার



পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের বিদায়!

ক্রীড়া ডেস্ক || ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ১১:০২ পিএম
পাকিস্তানকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের বিদায়!


নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। একইসঙ্গে নিজেরা হেরে পাকিস্তানের বিদায়ও নিশ্চিত করেছে শান্তরা। নিয়ম রক্ষার শেষ ম্যাচ তারা খেলবে ২৭ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তানের বিপক্ষে। তারপরই ঢাকার বিমান ধরতে হবে তাদের। 

নিউজিল্যান্ডের সাথে আজ জিতলে সেমিতে যাওয়ার আশা বেঁচে থাকতো বাংলাদেশের। সঙ্গে পাকিস্তানেরও সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের হারে স্বাগতিক পাাকিস্তানকেও বিদায় নিতে হচ্ছে। তাদের গ্রুপ থেকে নিউজিল্যান্ড এবং ভারত চলে গেলো সেমিতে। 

২৪ ফেব্রুয়ারির গুরুত্বপূর্ন ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ৫ উইকেটে, ২৩ বল হাতে রেখে। প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ করেছিল ২৩৬ রান। ৩০০ বলের মধ্যে ১৮১ টি ডট করেছেন শান্তরা। নিউজিল্যান্ড ২৩৬ টপকে গেছে ৪৬.১ ওভারে। 

২৩৬ রানও কম ছিলো না, যদি ভালো বল করে নিয়মিত উইকেট নেয়া যেতো। তবে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের শক্তিমত্তার তুলনায় বাংলাদেশের বোলাররাই ছিলেন পিছিয়ে। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা, তাই আশাই ছিল বাংলাদেশের একমাত্র ভেলা। তবে বোলাররা করতে পারেন নি কাজের কাজ। 

২৩৭ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়েছিল। প্রথম ওভারে শেষ বলে দলীয় শূন্য রানে ফেরেন নিউজিল্যান্ডের উদ্বোধনী ব্যাটার উইল ইয়াং। ১৫ রানে পড়ে দ্বিতীয় উইকেট, ফেরেন কেন উইলিয়ামসন। তৃতীয় উইকেট পড়ে ৭২ রানে। ৪৫ বলে ৩০ করে আউট হন ডেভিড কনওয়ে। অন্যপ্রান্তে রাচিন রাভিন্দ্র ছিলেন অপ্রতিরোধ্য, ৫০ বলে করে ফেলেন ৫১ রান। লাথামকে নিয়ে এগোতে থাকেন জয়ের দিকে। ২১.১ ওভারে দলীয় ১০০ পূর্ন হয়। ২৫ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিলো ১১১/৩। বাংলাদেশের তখন ছিলো ১১৪/৪। এরপর ধীরে ধীরে ম্যাচ বাংলাদেশের হাত থেকে বেরিয়ে যায়। 

মিরাজের স্পিন বলে কোনো স্পিন হচ্ছিলো না। রিশাদও ছিলেন নিস্প্রভ। পেসাররা জায়গা মতো বল ফেলতে পারেন নি। যার ফলে হেসে খেলে রান তুলছিলেন নিউজিল্যান্ডের দুই ব্যাটার লাথাম এবং রাচিন রাভিন্দ্র। রান আউট মিস, ক্যাচ মিস- সাথে নির্বিষ বোলিং; ফলাফল আরেকটি সহজ পরাজয়। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়। অথচ দেশ ছাড়ার সময় ভক্তদের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন অধিনায়ক শান্ত। এই টুর্নামেন্ট প্রমাণ করে- কোয়ালিটির দিক থেকে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। উন্নতি করতে হবে অনেক, প্রয়োজনে কোচিং স্টাফ বদলাতে হবে। 

শান্ত করেছিলেন ১১০ বলে ৭৭ রান। বিপরীতে রাচিন রাভিন্দ্র ৯৫ বলে করে ফেলেন সেঞ্চুরি। ১০৫ বলে তিনি ১১২ করে আউট হন। দলের রান তখন ২০১। তার মানে ৩৮.২ ওভারের ওই ঘটনার সময় পরাজয়ের প্রহর গুনছিল শান্তরা। ম্যাচের গতি প্রকৃতি বুঝতে শান্ত আর রাচিনের রান/বলের ইকুয়েশনই  উদাহরণ হিসেবে যথেষ্ট। বাংলাদেশ যখন ব্যাট করছিল তখন উইকেট নেয়া ছিল মুড়ি মুড়কির মতো। আর নিউজিল্যান্ড যখন ব্যাট করে তখন উইকেট ছিলো অধরা। ওদিকে বাংলাদেশ দলে ছিলো ক্যাচ মিসের মহড়া। 

২১৪ রানে ফেরেন টম লাথাম, তিনি ৭৬ বলে করেন ৫৫ রান।  ফিলিপস ২১ এবং ব্রেসওয়েল ১১ রানে অপরাজিত ছিলেন। 

টাইগার বোলারদের মধ্যে তাসকিন, নাহিদ রানা, মোস্তাফিজ এবং রিশাদ নিয়েছেন একটি করে উইকেট। মিরাজ ১০ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। 

এর আগে ব্যাাটিং ট্র্যাকে পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্রেসওয়েল এর ঘূর্নিতে আউট হয়ে যান তানজিদ তামিম। উচিত ছিল প্রথমবারের মতো আসা  স্পিন বলটাকে আগে পরখ করা। তা না করে চালিয়ে খেলে ক্যাচ আউট। স্পিনার এনেই সাফল্য পায় নিউজিল্যান্ড। ছন্দে থাকা তামিম ক্যাচ দেন উইলিয়ামসনকে। ২৪ বলে করেন ২৪ রান। দলের রান তখন ৪৫। ১২তম ওভারের শেষ বলে ফেরেন মিরাজ। ১৪ বলে করেন ১৩ রান, দলের রান তখন ৬৪। মিরাজ আউট হওয়ার পর থেমে যায় রান তোলার গতি। পরের ৬ ওভারে আসে মাত্র ১৯ রান। ২০.৩ ওভারে আউট হয়ে যান হৃদয়, আবারো আঘাত হানেন স্পিনার ব্রেসওয়েল। হৃদয় করেন ২৪ বলে মাত্র ৭। দলের ৯৭ রানে পড়ে তৃতীয় উইকেট। প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যর্থ মুশফিক। বয়সের কারণে তার এখন অবসরে যাওয়ার সময় হয়েছে- সেই বার্তাই দেয় তার পারফরমেন্স। দলকে বিপদে ফেলে মুশফিক চলে যান ৫ বলে ২ রান করে, ১০৬ রানে পড়ে চতুর্থ উইকেট। ক্রিজে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। 

অন্যদের আসা যাওয়ার মাঝে কিছুটা ধৈর্য্যের পরিচয় দেন ওপেনার শান্ত। ৭১ বলে করেন ৫০। কিন্তু, ব্রেসওয়েলের বলেই মুশফিকের পথ ধরেন রিয়াদ। ১৪ বলে করেন মাত্র ৪ রান! ২৬/১ ওভারে পড়ে পঞ্চম উইকেট। ১১৮ রানে নেই টপ অর্ডারের ৫ জন। ১০ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন নিউজিল্যান্ডের ব্রেসওয়েল। 

অনেক দিন ধরেই ব্যাটিং ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছিলো বাংলাদেশ। সেই বৃত্ত ভাঙ্গতে পারেনি তারা। এরপর উইকেটে আসেন জাকের আলী অনিক। ভারতের বিপক্ষে ২২৮ করেছিল বাংলাদেশ, সন্দেহ জাগে এই ম্যাচে হয়তো সেটুকুও হবে না। ব্যাটিং ট্র্যাক বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠে ভয়ঙ্কর! ডট বলের বন্যা বয়ে যায়। রেকর্ড ১৮১ টি ডট করেন টাইগার ব্যাটারগণ। 

 ধৈর্যের পরীক্ষায় ব্যর্থ হন শান্তও। দলীয় ১৬৩ রানে (৩৭.২ ওভার) সাজঘরে ফেরেন তিনি। ১১০ বলে করেন ৭৭ রান। ৬ষ্ঠ উইকেট পতনের পর বড় রানের লক্ষ্য ফিকে হয়ে যায়। আশা জাগিয়েও নিরাশ করেন জাকের আলী। ২৩১ রানে ফিরতে হয় তাকে। জাকের আলী তাড়াহুড়া করতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান ৪৫ করে (৫৫ বল)। অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে। ৪৯.২ ওভারে ১০ রান করে তাসকিন যখন ফেরেন তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৩৬। পরের ৪ বল থেকে নাহিদা রানা কোনো রান নিতে পারেন নি। 

নিউজিল্যান্ডের বোলারদের প্রধান কৃতিত্ব টাইগার ব্যাটারদের বেঁধে রাখা, রান নিতে না দেয়া। সেখানে তারা সফল। সবচেয়ে সফল বোলার ব্রেসওয়েল, যার ঝূলিতে ভরেছেন ৪ উইকেট। দুটি পেয়েছেন উইল রুরকি। ম্যাট হেনরি এবং কাইল জেমিসন নিয়েছেন একটি করে উইকেট। 

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ মানেই প্রতিপক্ষের জন্য সহজ পয়েন্ট পাওয়া এবং রান রেট বাড়িয়ে নেয়া! 



আরো পড়ুন