০৫ মে ২০২৫, সোমবার



বিলুপ্ত প্রজাতির ‘বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ’ স্বপ্ন দেখাচ্ছে

জামাল হোসেন বাপ্পা, বাগেরহাট || ০৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩, ১২:০২ পিএম
বিলুপ্ত প্রজাতির ‘বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ’ স্বপ্ন দেখাচ্ছে


বিলুপ্ত প্রজাতির ‘বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ’ নতুন করে বংশবৃদ্ধি শুরু করেছে। দেশের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র সুন্দরবনের করমজলে প্রজনন কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় এই বংশবৃদ্ধির কাজ শুরু হয়েছে। তারা বলছেন, এরফলে বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ বিলুপ্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেলো। নিয়মিত প্রজনন-পরিচর্যা হলে করমজলের এই কচ্ছপ বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব হবে।  

করমজল কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৪ সালে ৮টি পূর্ণবয়স্ক বাটাগুর বাসকা ও  ৯৪টি বাচ্চা দিয়ে শুরু হয়  কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়া।  এই প্রজনন কেন্দ্র থেকেই বড় হওয়া বাটাগুর বাসকার বাচ্চা ২০১৭ সালে ২টি, ২০১৮ সালে ৫টি, ২০১৯ সালে ৫টি কচ্ছপ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে অবমুক্ত করে বন বিভাগ। এছাড়া, সর্বশেষ  বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০টি কচ্ছপ সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে। 

২০১৭ সালে দুটি কচ্ছপের ৬৩টি ডিম থেকে ৫৭টি বাচ্চা হয়। ২০১৮ সালে দুটি কচ্ছপের ৪৬ ডিম থেকে ২১টি বাচ্চা পাওয়া যায়। ২০১৯ সালে একটি কচ্ছপের ৩২টি ডিম থেকে ৩২টি বাচ্চা পাওয়া যায়। ২০২০ সালে ১০ মে একটি কচ্ছপের ৩৫টি ডিম থেকে ৩৪টি বাচ্চা পাওয়া যায়। এসব বাচ্চা থেকে ২০১৭ সালে ২টি, ২০১৮ সালে ৫টি, ২০১৯ সালে ৫টি কচ্ছপ সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে অবমুক্ত করে বন বিভাগ। 

২০০০ সালের দিকে বন্যপ্রাণী গবেষকরা মনে করেন, পৃথিবীতে আর বাটাগুর বাসকার কোনো অস্তিত্ব নেই। পরে ২০০৮ সালে গবেষকরা বাটাগুর বাসকা আছে কি না, তা খুঁজতে শুরু করেন। এরপর তারা নোয়াখালী ও বরিশালের বিভিন্ন জলাশয়ে ৮টি বাটাগুর বাসকার সন্ধান পান। এর মধ্যে ৪টি পুরুষ ও ৪টি স্ত্রী। প্রজননের জন্য গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হয় কচ্ছপগুলোকে।



বনবিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকেরা নিবিড়ভাবে লালন-পালন ও প্রজননের চেষ্টা করে বাটাগুর বাসকাগুলোকে। এরপরও তেমন সাফল্য পাওয়া যায়নি। তবে, কয়েক বছরে গাজীপুরে প্রায় ৯৪টি বাচ্চা দিয়েছিল ৮টি মা কচ্ছপ। সেখানে ভালো সাড়া না পাওয়ায় ২০১৪ সালে মূল ৮টি বাটাগুর বাসকা ও ৯৪টি বাচ্চাকে করমজল কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। 

সুন্দরবনের করমজল কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘সর্বশেষ (৬ মার্চ)-২০২২ সকালে বন্যপ্রাণী কেন্দ্রের কচ্ছপ লালন-পালন কেন্দ্রের পুকুর পাড়ে বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা ৩৪টি ডিম দিয়েছে। বাচ্চা ফোটানোর জন্য ডিমগুলো ইনকিউবেশনে (বালুর মধ্যে) রাখা হয়েছে।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘৬০ থেকে ৬৫ দিন পরে এই ডিম থেকে ৩৩টি বাচ্চা ফুটে বের হয়েছে। বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির এই কচ্ছপ আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে লালন পালন করে আসছি। বংশ বাড়ানোর জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজরে রাখছি। সুন্দরবনে অবমুক্তির পর বর্তমানে আমাদের এই প্রজনন কেন্দ্রে ৩৮৩টি প্রাপ্ত বয়স্ক কচ্ছপ রয়েছে।’

ঢাকা বিজনেস/এনই/



আরো পড়ুন