ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পার্চিং পদ্ধতিতে বোরো ধান আবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, চলতি বোরো মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯ উপজেলায় ১ লাখ ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। জেলায় ৫০ ভাগেরও বেশি জমিতে পার্চিং পদ্ধতিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। শতভাগ পার্চিংয়ের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত, কীটনাশক ছাড়া ডাল বা কঞ্চি স্থাপন করে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার কৌশলকে পার্চিং পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে জমিতে ডাল বা কঞ্চি স্থাপন করে পাখি বসার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে কৃষকরা ধান রোপার পর জমিতে পার্চিং করতে চাইতেন না। ফলে তাদের ফলনও কম হতো। বর্তমানে এই পদ্ধতি তাদের বেশ সুফল দিচ্ছে। ফলনও বেড়েছে। পার্চিং পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হলো, পাখির বিষ্টা জমিতে পড়ে জৈবসার তৈরি করে জমির উর্বরতাশক্তি বাড়ায়। এই পদ্ধতিতে ফসলি জমিতে পোঁতা ডাল বা কঞ্চির ওপর পাখি বসে ফসলি জমির ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। এর ফলে আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। ফলে কম খরচে বেশি ফলন পাওয়া যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার তালশহর পূর্ব ইউনিয়ন, সাদেকপুর পূর্ব ইউনিয়ন, নাটাই দক্ষিণসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে বোরো জমিতে স্থানীয় কৃষকরা বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁতে দিয়েছেন। এসব ডাল-কঞ্চিতে ফিঙ্গে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রার মতো পাখি বসছে। একটি ফিঙে পাখি সারাদিনে কমপক্ষে ৩০টি করে মাজরা পোকার মথ, ডিম ও পুত্তলি খেয়ে থাকে।
কৃষক মো. মনির মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে আমন চাষ করেছি। জমির মাঝখানে বাঁশ ও গাছের ডাল পুঁতে রেখেছি। সেখানে পাখি এসে বসে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় ধরে খাচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করে আসছি। এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করায় তুলনামূলক খরচ কমেছে। ফলনও বেড়েছে।
আরেক কৃষক মমতাজ মিয়া বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও আমাদের সব জমির ধানেই পোকায় আক্রমণ করতো। পোকা দমনে জমিতে কীটনাশক দিয়েও তেমন ফল পাওয়া যেতো না। এরপর কৃষি অফিসের সঙ্গে কথা বলে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করি। এখন তার সুফল পাচ্ছি।’
কৃষক ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘পার্চিং পদ্ধতিতে ধান চাষ পরিবেশবান্ধব। ধানের চারা রোপণের পরপর বাঁশের কঞ্চি ও গাছের ডাল পুঁতে রাখলে তাতে পাখি বসে ক্ষতিকর পোকা দমন করে। কীটনাশক কম লাগে। এতে ফলনও ভালো হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা বলেন, ‘সাধারণত ধান গাছে মাজরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, খাটসুর, ঘাসফড়িং ও পাতাফড়িং আক্রমণ করে। পাখিরা জমিতে পুঁতে রাখা পার্চিংয়ে বসে এসব ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফেলে।’
সুশান্ত সাহা আরও বলেন, ‘ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি খুবই কার্যকর। এই পদ্ধতি কাজে লাগালে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়। সেইসঙ্গে কৃষকের উৎপাদন খরচও কম হয়। বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা যায়। প্রতিবছরই পার্চিং পদ্ধতির চাষ বাড়ছে। এই বছর এখন পর্যন্ত ৫০ ভাগেরও বেশি জমি পার্চিংয়ের আওতায় এসেছে।’
ঢাকা বিজনেস/এনই/