০৪ মে ২০২৫, রবিবার



বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে কাতার ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

ঢাকা বিজনেস ডেস্ক || ২৩ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:০৪ এএম
বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে কাতার ব্যবসায়ীদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান


বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন কারখানা স্থানান্তরের জন্য কাতারের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মঙ্গলবার দোহায় তাঁর সম্মানে আয়োজিত এক ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক সংবর্ধনায় বক্তৃতাকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

ড. ইউনূস বলেন, "বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান অনন্য। একদিকে নেপাল, অন্যদিকে ভুটান, আর উত্তরে ভারতের সাতটি রাজ্য। এই পুরো অঞ্চল যদি একত্রিতভাবে অর্থনৈতিকভাবে একীভূত হয়, তাহলে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক বাজার গড়ে তোলা সম্ভব হবে। নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোনো সমুদ্রবন্দর নেই। বাংলাদেশই একমাত্র সমুদ্রপথের সুযোগ দিতে পারে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা একটি আঞ্চলিক বাণিজ্যিক হাব গড়ে তুলতে পারি।”

তিনি আশ্বাস দেন, “বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন ও বিনিয়োগে যত রকমের সহায়তা প্রয়োজন, তা সরকার থেকে নিশ্চিত করা হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি অর্থনৈতিক কাঠামো তৈরি করা, যেখানে লাখ লাখ তরুণের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।”

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলনের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “দেশ-বিদেশে যেখানেই যাচ্ছি, বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি এবং ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী অত্যন্ত উদ্যমী ও সৃজনশীল। আমি সবাইকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি—দেখে যান কিভাবে আমাদের তরুণ প্রজন্ম সম্ভাবনার বাতিঘর হয়ে উঠেছে।”

তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ, যেখানে ১৮ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি জনসংখ্যার বয়স ২৭ বছরের নিচে। এরা প্রযুক্তি, শিক্ষা ও জ্ঞানে সমৃদ্ধ। শুধু তরুণ পুরুষই নয়, এই পরিবর্তনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণীরাও। রাস্তায় নারীদের প্রতিবাদ দেখার মতো একটি ঘটনা ছিল। সেই শক্তি নিয়েই আমরা একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে চাই, যেখানে অতীতের অন্যায় আর থাকবে না।”

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পটভূমি তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, “গত সরকারের সময়ে অর্থনীতি, বিচার ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। গত আট মাস ধরে সেই অব্যবস্থাপনার সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন খাতে সংস্কার কমিশন গঠন করেছি, যেগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছি। এই কাজ শেষ হলেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”

তিনি বলেন, “গত জুলাইয়ে যখন ছাত্ররা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করে, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে। এর আগেও ১৬ বছর ধরে দেশে ভুয়া নির্বাচন, গুম, টর্চার সেল, ব্যাংক লুটসহ নানা ধরনের অন্যায় চলছিল। এসবের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আহ্বানে সারাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। হাজার হাজার তরুণ প্রাণ হারায়। একপর্যায়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর বাসভবন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেদিন থেকেই দেশ শাসনমুক্ত হয়। আমি তখন দেশের বাইরে ছিলাম, কিন্তু পরিস্থিতির দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বানে আমাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিতে হয়।”

তিনি তাঁর বক্তব্যে কাতারের উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, “বাংলাদেশ আজ এক নতুন সম্ভাবনার দেশে রূপ নিচ্ছে। এই মুহূর্তে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়। আসুন, এই নবযাত্রায় আপনাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন।



আরো পড়ুন